প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার এবং সেইসঙ্গে কোন সময়ে পেয়ারা খাওয়া ভালো, এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণাবলী সমূহ, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ, যাদের পেয়ারা খাওয়া উচিত নয় এবং কিভাবে তা খাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে পারেন।
বিজ্ঞানীদের মতে, পেয়ারা পাতার রসেও রয়েছে ফলের সমান পুষ্টিগুণ। যদি নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন, তাহলে দূর হবে বিভিন্ন ধরনের জটিল অসুখ-বিসুখ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার
মূলত পেয়ারাতে রয়েছে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, পটাশিয়াম, ফসফরাস, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, ফ্ল্যাবোনয়েডস, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন এ, সি ও ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ। তাই, প্রতিদিন একটি করে পেয়ারা খেতে পারলে যেসব উপকার পাওয়া যায়, যেমন-
সাধারণত পেয়ারাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে না পারার কারণে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা উপকারী একটি ফল।
পেয়ারাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। আর তার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কম হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অর্থাৎ সাধারণত যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য পেয়ারা অত্যন্ত উপকারী ফল হতে পারে।
অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়মিত পেয়ারা খেতে হবে, কারণ পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটরি ফাইবার থাকায় যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
জেনে রাখা ভালো যে, পেয়ারা অর্শ রোগে খুবই উপকারী এবং পেয়ারা খেলে পৌষ্টিকতন্ত্রও পরিস্কার থাকে। যেহেতু পেয়ারাতে ফাইবার, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমূহ বিদ্যমান, তার ফলে সেটি শরীর থেকে ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে থাকে।
সাধারণত যারা সর্দি বা কাশির সমস্যা ভুগে থাকে বা হঠাৎ করেই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশিজনিত সমস্যায় ভুগছে, ঠিক এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কিন্তু পেয়ারা খেতে হবে। কেননা এতে করে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং রোগ সারাতেও সহায়তা হবে।
প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার হিসেবে এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন নামক উপাদান, যা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার হাত থেকেও অনেকটা রক্ষা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত পেয়ারা খেলে এসব উপকার মিলতে পারে।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন। অর্থাৎ পেয়ারাতে রয়েছে খনিজও নানারকম পুষ্টি উপাদান, যা ত্বকের কুঁচকানো ভাবকে টানটান করতে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ নিয়মিত বা প্রতিদিন পেয়ারা খেলে তা ত্বকের বলিরেখা দূর হবে এবং বিভিন্ন ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যাগুলোও হ্রাস পাবে।
যারা প্রচন্ড মানসিক চাপ বা দৃশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন, তাদের নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত। কেননা পেয়ারাতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান, যা আপনার মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে।
পেয়ারাতে রয়েছে ডায়েটরি ফাইবার, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মত উপাদানসমূহ. যা শরীরের মেদ বা ওজন ঝরাতে সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে যাদের ওজন অত্যধিক, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে।
কোন সময়ে পেয়ারা খাওয়া ভালোঃ
সাধারণত সকালে নাস্তার পর পেয়ারা খাওয়ার উপযুক্ত এবং সঠিক সময়। তবে কেউ যদি সকালের নাস্তার পরে না খেতে পারেন, তাহলে অন্ততপক্ষে তা দুপুর ১২টার মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো। কেননা, দিনের শুরুর দিকে যদি একটা পেয়ারা খাওয়া যায়, তাহলে তা সারাদিনের জন্য শরীরে এনার্জি যোগাতে সহায়তা করে থাকে।
পেয়ারার বিভিন্ন পুষ্টিগুণাবলী সমূহঃ
প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার এর মধ্যে পেয়ারার স্বাস্থ্যগুণ ও পুষ্টিগুণাবলী অসামান্য এবং অভূতপূর্ব। অর্থাৎ, পেয়ারায় রয়েছে আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার, পটাশিয়াম, ফসফরাস, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিন, ফ্ল্যাবোনয়েডস, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন এ, সি ও ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ। তাই বলা যেতেই পারে যে, একটি পেয়ারায় মাত্র ১১২ ক্যালোরি ও ২৩ গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেটস রয়েছে। এছাড়া ৯ গ্রাম ফাইবারও থাকে। ১ কাপ পেয়ারা টুকরো ১.৬ গ্রাম ফ্যাট ও ৪ গ্রামের বেশি প্রোটিন থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের পেয়ারা কতটা নিরাপদঃ
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পেয়ারা সুপার ফুড হিসেবে সনাক্ত করা হয়। কারণ এতে বেটা ক্যারোটিন, ফোলাইটের মতো খনিজ উপাদানসমূহ থাকায় তা শরীরের জন্য পেয়ারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়।
এক্ষেত্রে একটি ১০০ গ্রাম কাটা পেয়ারায় থাকে ৯ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি। অনেক সময় অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়ার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, চিকিৎসকগণ অবশ্য ডায়াবেটিক রোগীদের অতিরিক্ত পেয়ারা না খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।
যাদের ক্ষেত্রে পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়ঃ
যদিও আমরা জানি যে, পেয়ারা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা শরীরের প্রয়োজনে এড়িয়ে চলাটা উচিত, যেমন-
সাধারণত যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে, (যেমন-ডায়রিয়া, বদহজম বা IBS আছে) এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত পেয়ারা না খাওয়াই উত্তম। কারণ এতে করে শরীরের মধ্যে নানাপ্রকার অস্বস্তি এবং সমস্যা তৈরি হতে পারে।
কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। কারণ পেয়ারাতে পটাশিয়াম বেশি পরিমাণে থাকায় তা সমস্যা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা অবশ্যই উচিত।
আবার যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগার ধাঁত রয়েছে, এমন ব্যক্তিদেরও নিয়মিত পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ এমন অবস্থায় পেয়ারা খেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
সাধারণত সদ্য গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের ক্ষেত্রে পেয়ারা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে, কারণ এতে করে শিশুর স্তন্যদানসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি হতে পারে।
যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে ত্বকের সমস্যা (একজিমাজনিত) সমস্যায় আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের অবশ্যই পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। কারণ পেয়ারায় এমন কিছু উপাদান বিদ্যমান যা এক্ষত্রে অ্যালার্জি হতে পারে।
অনেক সময় অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়ার কারণে কিন্তু শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত বা অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
যে সমস্ত রোগীর অস্ত্রোপাচার হবে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অন্তত ২ সপ্তাহ আগে থেকেই পেয়ারা খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে বা পেয়ারা খাওয়া যাবে না। কারণ এতে করে রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
যদিও পেয়ারা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে থাকে, তথাপি যারা ডায়াবেটিসের ঔষুধ সেবন করে থাকেন, তাদের পেয়ারা খাওয়ার আগে রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
কিভাবে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারেঃ
সাধারণত পেয়ারা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন-প্রথম কাজ হচ্ছে পেয়ারাটা আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, অর্থাৎ এর কোন বিকল্প নেই। এরপর ইচ্ছে করলে এটি কামড় দিয়ে খাওয়া যায়। মূলত পেয়ারার খোসা বা নরম বীজ সবই উপকারী। তাই একটি পেয়ারার সবকিছুই খাওয়া হয়ে থাকে। এবার কেউ যদি এটি কামড় দিয়ে না খায়, তাহলে তা সালাদ, জুস, স্মুদি, সস বা ডেজার্ট করেও খেতে পারে। অর্থাৎ যদি সালাদ করতে চাইলে অন্যান্য ফলের সাথে পেয়ারা মিশিয়েও সালাদ তৈরি করে খাওয়া যায়। আবার ব্লেন্ড করে জুস বা স্মুদি করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে এর বিচি বা বীজগুলো ইচ্ছে করলে ছেঁকে বাদ দিতে পারেন। অনেকেই আবার পেয়ারার সস/চাটনি তৈরি করেও খেয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার পেয়ারাকে অতি উপাদেয় বা সুস্বাদু করার জন্য দই, ওটমিল বা আইসক্রিমের উপর দিয়ে খেয়ে থাকেন। এতে করে পেয়ারার একটি মিষ্টতা এবং এবটু কষ্টাভাব যা অত্যন্ত মুখরোচক হিসেবে সমাদৃত হয়ে থাকে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, কোনমতেই তা রাত্রে না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে করে পেটে গ্যাস বা ফাঁপা ভাবের সৃস্টি হতে পারে এবং সেইসঙ্গে যাদের সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা লাগলে অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে।
জেনে নিন পেয়ারা কী উপকারি না কী ক্ষতি- পরিশেষেঃ
পেয়ারা আমাদের কাছে শুধু একটি ফলই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য এক গুণ অপরিহার্য উপাদান, যা আমরা অনেকেই জানি। তদুপরি, প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার এর মধ্যে যেমন- পেয়ারার পুষ্টিগুণ, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা কতটা নিরাপদ, যাদের পেয়ারা খাওয়া উচিত নয় বা কিভাবে পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে এবং সময়টি পেয়ারা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় ইত্যাদি বিষয়গুলিই ছিল আজকের আলোচনার মূখ্য বিষয়সমূহ।
আসলে পেয়ারাকে বলা হয় বাংলার আপেল। অর্থাৎ এমন অনেক পরিবার আছে যারা আপেল কিনতে পারেন না, কিন্তু পেয়ারা যেহেতু আমাদের দেশেই উৎপাদিত একটি ফল তাই এটি খুব সহজলভ্য ক্রয়-ক্ষমতার আওতায়। অর্থাৎ প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার সম্পর্কে আপনার যাবতীয় প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে
সেটি আপনি অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আমরা সবসময়
পাঠকের মূল্যবান মন্তব্য গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকি। সর্বোপরি আজকের আলোচনার বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে ও জানতে পেরেছেন। পরিশেষে দীর্ঘক্ষণ প্রতিদিন একটি পেয়ারা খেলে মিলবে যেসব উপকার বিষয়ক আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমি মিঠু সরকার, দুই বছর ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখে আসছি।
ব্লগ পোস্ট, ওয়েব কনটেন্ট ও মার্কেটিং রাইটিংয়ে আমার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে।
মানসম্মত ও পাঠকবান্ধব লেখার মাধ্যমে অনলাইন সফলতা গড়াই আমার লক্ষ্য।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url